বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে মে মাসের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে, বেড়েছে অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধার – মে মাসের সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন মে, ২০২৫’–এ এসব তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ)।
বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতি মাসে এমএসএফ এই প্রতিবেদন তৈরি করে। আজ ৩১ মে এ প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসে আটকের ভয়ে পালাতে গিয়ে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ড তেমন না থাকলেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্ব ও সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দুস্কৃতিকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মে মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৪ টি ঘটনায় শিকার হয়েছেন ৩৫৯ জন। তাদের মধ্যে ৮ জন নিহত এবং ৩৫১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৯ জন গুলিবিদ্ধ এবং নিহতদের মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে ১ জন কিশোরসহ ৬ জন, নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে ১ জন কিশোর এবং আওয়ামী-জামাত সংঘর্ষে জামাতের ১ জন নিহত হয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার পর সাবেক সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ যে কোনো ব্যক্তিকে আন্দোলনবিরোধী বলে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে।
এমএসএফ বলছে, সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকারের পতন সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৪২২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তর করা হয়েছে। যার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৪১ জন এবং অন্যান্য মামলায় ২৮১ জন। এ ছাড়াও চলতি মাসে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩২ জন এবং সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত এবং অন্যান্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৪ হাজার ৭ শত ৩৩ জন।
বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে এমএসএফ দেখেছে, এপ্রিল মাসের মতোই মে মাসেও নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা যেমন—হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে, তেমনি শিশু ও নারীদের প্রতি শারীরিক নির্যাতনও বেড়েছে।
মে মানে ৩৬৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা গত মাসের তুলনায় ৬টি বেশি। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ৩৬২টি। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৫৯টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৬টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।
মে মাসে জেল হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে। সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর, জমি দখল, বাড়িঘরে অগ্নিসযোগ, এমনকি ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
এমএসএফ আরও জানিয়েছে, সীমান্তে হতাহতের ঘটনা বন্ধ হয়নি বরং বাংলা ভাষাভাষীদের পুশইন করার ঘটনা ঘটিয়ে সীমান্ত অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া মে মাসে সীমান্তে গুলি করে হত্যা ও বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, মে মাসে অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধারও বেড়েছে। গণপিটুনির মতো আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনাও বন্ধ হয়নি । ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এমএসএফ গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। মানবাধিকার লংঘন প্রতিরোধ ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে এমএসএফ জোর দাবি জানিয়েছে।