নিউইয়র্ক, ৫ জুলাই ২০২৫ : বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের উপর চলমান নির্যাতন ও বাক্স্বাধীনতা হরণের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের একমাত্র আন্তর্জাতিক সংগঠন নিউজ পোর্টাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (এনপিজেএ) এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী, শিক্ষক-গবেষক, মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এনপিজেএ’র বিবৃতি: সাংবাদিকদের উপর নজিরবিহীন নির্যাতন
এনপিজেএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের পরিস্থিতি দমবন্ধকর। শতাধিক সাংবাদিক কারাগারে রয়েছেন, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ হয়রানিমূলক অভিযোগ আনা হয়েছে। হাজারেরও বেশি সাংবাদিক ও সম্পাদক চাকরি হারিয়েছেন। সরকারের উপদেষ্টা বা ক্ষমতাবান নেতাদের প্রশ্ন করলেই সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এমনকি, সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ১১ মাসে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন অভূতপূর্ব রূপ নিয়েছে। অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৩০০-এর বেশি সাংবাদিকের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, শতাধিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ, এবং সহস্রাধিক সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া, ১৬৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল এবং ১০১ জনের প্রেসক্লাব সদস্যপদ স্থগিত বা বহিষ্কার করা হয়েছে।”
প্রবাসী সমাজের উদ্বেগ: বাক্স্বাধীনতা হরণে সরকারের জড়িত থাকার সন্দেহ
নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক-গবেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, “গত ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর থেকে বাংলাদেশে সাংবাদিক, লেখক ও গবেষকদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চলছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে মতপ্রকাশের উপর লিখিত-অলিখিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে, যা বাক্স্বাধীনতাকে হরণ করছে। এটি দেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”তারা আরও বলেন, “এই নির্যাতনের প্রতিকারে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই, বরং সরকার নিজেই এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের সন্দেহ। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা অতীতে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু এখন তাদের আমলেই এই নির্যাতন চলছে, যা আমাদের হতাশ ও আহত করেছে।”জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ও সাংবাদিক নিহতের ঘটনা
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর গণ-আন্দোলন ও তার পরবর্তী সময়ে অন্তত ১০ জন সাংবাদিক নিহত এবং অসংখ্য সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় সরকার কোনো সহযোগিতা না করে বরং নির্যাতনের পরিধি বাড়িয়েছে। পত্রিকা অফিসের সামনে ‘মব’ সৃষ্টি করে হামলা ও ‘জেয়াফত’-এর মতো ঘটনা বিশ্বে বিরল বলে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের তালিকা:
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন এনপিজেএ’র প্রধান উপদেষ্টা ও কলামিস্ট এমএ সালাম, সভাপতি ও বাপসনিউজ সম্পাদক হাকিকুল ইসলাম খোকন, সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মানবাধিকার নেতা ক্যাপটেন (অব.) আবু বকর, প্রদীপ রজ্ঞন কর, রমেশ নাথ, আইরিন পারভীন, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, শাহ মোহাম্মদ বখতিয়ার আলী, এমএ করিম জাহাঙ্গীর, শওকত আকবর রিচি, ফারুক হুসাইন, ইসমাইল খান আনসারী, খুরশিদ আনোয়ার বাবলু, সাঈদুর রহমান সাঈদ, এম শাহজাহান বাবলু, জালাল উদ্দিন জলিল, গিয়াসউদ্দিন, টি. মোল্লা, হেলাল মাহমুদ, এবিএম সালেহ উদ্দিন, মোঃ নাসির, ওসমান গণি, সুবাস বডুয়া, বিশ্বজিৎ সাহা, শেলী ভৌমিক, আয়েশা আক্তার রুবি, রুমানা আক্তার, কায়কোবাদ খান, আকতার হোসেন, আসাফ মাসুক, শাহাদত হোসেন, কামাল হোসেন, হুমায়ুন আহমেদ চৌধুরী, জিল্লুল করিম, ফিরোজ মাহমুদ, ফিরোজ আহমেদ কল্লোল, এবিএম মিজানুল হাসান, আবুল কাশেম ভূঁইয়া, শহিদুল ইসলাম, দেলওয়ার হোসেন মোল্লা, সোহেল চৌধুরী, জুয়েল আহমেদ, মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, এবং একে চৌধুরী।