অরল্যান্ডো, ফ্লোরিডা, ২১ জুলাই ২০২৫ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরে চলমান লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনালের ১০৭তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন বিশ্বজুড়ে মানবসেবার অঙ্গীকারকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে। ১৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে বিশ্বের ১৯৫টি দেশ থেকে প্রায় ২০,০০০ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন, যা এটিকে সেবামূলক সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত করেছে। এই মহতী আয়োজনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট ২০-আর২ এর নবনির্বাচিত গভর্নর আসেফ বারী তার উজ্জ্বল উপস্থিতি দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার সঙ্গে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে অংশ নিয়েছেন তার সহধর্মিণী লায়ন মুনমুন হাসিনা বারী এবং তাদের সন্তান আদিব বারী।
কনভেনশনের তাৎপর্য
অরল্যান্ডোর কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই সম্মেলনটি ২০২৫-২৬ মেয়াদের নবনির্বাচিত গভর্নরদের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এই সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭৪০ জন নবনির্বাচিত গভর্নরের উপস্থিতি লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের সেবামূলক কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার প্রতিফলন ঘটায়। সম্মেলনের প্রশ্মতিক উদ্বোধনী অধিবেশনে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের ইনকামিং প্রেসিডেন্ট এ.পি. সিং তার নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন, যেখানে তিনি “Lead to Serve, Serve to Lead” মন্ত্রের উপর জোর দেন। এছাড়া, সম্মেলনে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, এবং যুবকদের ক্ষমতায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে লায়ন্সের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়।
নবনির্বাচিত গভর্নরদের সংবর্ধনা
রবিবার রাতে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য “সেলিব্রেশন ডিনার” এ গভর্নর আসেফ বারী তার পরিবারসহ অংশ নেন। এই অনুষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে নবনির্বাচিত ৭৪০ জন গভর্নরকে একই রঙের শার্ট প্রদান করা হয়, যা তাদের ঐক্য ও নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। মনোজ্ঞ সঙ্গীত পরিবেশনা, সুস্বাদু খাবার, এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনোদনমূলক আয়োজনের মাধ্যমে এই ডিনারটি অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই আয়োজন শুধু একটি সামাজিক মিলনমেলা ছিল না, বরং নতুন নেতৃত্বের মধ্যে সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম ছিল।

আসেফ বারী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত লায়ন্স নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং তার নেতৃত্বের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। তার উপস্থিতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সম্প্রদায়ের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্যারেড অফ নেশনস: বৈচিত্র্যের উৎসব
সোমবার সকালে অনুষ্ঠিত “প্যারেড অফ নেশনস” ছিল এই সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও লায়ন্স ডিস্ট্রিক্টের প্রতিনিধিরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীকী পোশাক পরে এই বর্ণিল শোভাযাত্রায় অংশ নেন। আসেফ বারী নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট ২০-আর২ এর প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আগত লায়ন্স সদস্যদের সঙ্গে তাদের প্যারেডে অংশ নেন। এই দ্বৈত অংশগ্রহণ তার বাংলাদেশি শিকড়ের প্রতি গভীর সম্মান এবং বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।

প্যারেডে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের ইনকামিং প্রেসিডেন্ট এ.পি. সিং, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টগণ, এবং শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আসেফ বারী তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, যা তার ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতার ইঙ্গিত দেয়। হাজার হাজার লায়ন্স সদস্য নিজ নিজ দেশের পতাকা হাতে, রঙিন পোশাকে সেজে এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন, যা লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের বৈচিত্র্য ও ঐক্যের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি তৈরি করে।
আসেফ বারীর নেতৃত্ব ও বাংলাদেশি প্রতিনিধিত্ব
আসেফ বারী, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক, নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট ২০-আর২ এর গভর্নর হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার নেতৃত্বে ডিস্ট্রিক্ট ২০-আর২ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং কমিউনিটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার সহধর্মিণী মুনমুন হাসিনা বারী, একজন লায়ন সদস্য হিসেবে, এবং তাদের সন্তান আদিব বারীর উপস্থিতি এই সম্মেলনকে পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী লায়ন সদস্য জানান, “আসেফ বারীর উপস্থিতি এবং তার বাংলাদেশি শিকড়ের প্রতি গর্ব আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি শুধু নিউ ইয়র্কের প্রতিনিধিত্বই করেননি, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকেও বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরেছেন।”
লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ
লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বব্যাপী ১.৪ মিলিয়ন সদস্য নিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, এবং যুবকদের ক্ষমতায়নের মতো ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। এই সম্মেলনে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (এলসিআইএফ) ২০২৭ সালের মধ্যে ১.৫ মিলিয়ন সদস্যের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। নবনির্বাচিত গভর্নরদের নেতৃত্বে এই লক্ষ্য অর্জনে নতুন গতি সঞ্চারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অরল্যান্ডোর এই সম্মেলন শুধু একটি মিলনমেলা নয়, বরং বিশ্বজুড়ে মানবিক সেবার অঙ্গীকারকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। আসেফ বারীর মতো উদ্যমী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল আগামী দিনে আরও বৃহৎ পরিসরে মানব কল্যাণে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।