হাকিকুল ইসলাম খোকন: গত ৩১ জুলাই, বৃহস্পতিবার, নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার জামে মসজিদে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামের আনুষ্ঠানিক শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই উপলক্ষে মসজিদের সামনে এবং পার্শ্ববর্তী হোয়াইট প্লেইনস রোডে দশ হাজারেরও বেশি পুলিশ অফিসার ও সাধারণ মানুষ সমবেত হয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শেষ বিদায় দেন। মসজিদের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর ক্যাথি হকুল, মেয়র এরিক অ্যাডামস, পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এই সময় গভর্নর হকুল সাদা শার্টের ওপর কালো স্যুট এবং মাথা ও গলায় কালো স্কার্ফ বা হিজাব পরিধান করেছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমস মঙ্গলবার এই ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল, “ফিউনেরালে হকুলের হেডস্কার্ফ ব্যবহারে জি.ও.পি সিনেটর বিরক্ত”।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গভর্নর হকুলের হিজাব পরা ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হয়, এবং এর নিচে প্রশ্ন করা হয়, “গভর্নর কেন হিজাব পরেছেন?” এই পোস্টটি শেয়ার করেন টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ, এবং তিনি মন্তব্য করেন, “Um, wut?” (অর্থাৎ, “হুম, এটা কী?”)।
নিউইয়র্ক টাইমস ব্যাখ্যা করেছে যে, মুসলিম ঐতিহ্য অনুযায়ী মসজিদে নারীরা সাধারণত ধর্মীয় পোশাক পরেন এবং তাদের জন্য পৃথক বসার ব্যবস্থা থাকে। তবে গভর্নর হকুল এবং মেয়র অ্যাডামস পাশাপাশি বসেছিলেন। এছাড়া, অনেক পুরুষ মসজিদে টুপি পরেন, যা মুসলিম ধর্মীয় রীতির অংশ। শেষকৃত্যে এনওয়াইপিডি কমিশনার জেসিকা টিশ অফিসার দিদারুল ইসলামের প্রতি আবেগঘন বক্তব্য রাখেন, এবং তিনিও মাথায় কালো হেডস্কার্ফ পরেছিলেন। মসজিদের বাইরে শতাধিক নারী, যাদের বেশিরভাগই ইউনিফর্ম পরা পুলিশ অফিসার ছিলেন, তারাও স্কার্ফ পরে অপেক্ষা করছিলেন।
সিনেটর ক্রুজের মন্তব্যের জবাবে গভর্নর হকুল তাঁর ‘এক্স’ অ্যাকাউন্টে লেখেন, “শোকাহত পরিবারের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখানোই নেতৃত্বের কাজ এবং এটাই মৌলিক শিষ্টাচার।” তবে বিতর্ক এখানেই থামেনি। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (CAIR) শনিবার সিনেটর ক্রুজকে গভর্নর হকুল এবং দিদারুল ইসলামের পরিবারের কাছে তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়।
এর প্রতিক্রিয়ায়, রবিবার সিনেটর ক্রুজ আবারও ‘এক্স’-এ লেখেন, “তোমার প্রতিদিনই হিজাব পরা উচিত, কারণ তুমি অত্যন্ত শালীন।” এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এবং গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে।