মীর দিনার হোসেন: যুক্তরাষ্ট্র মায়ানমারের সামরিক জান্তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মিত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এসেছে মায়ানমারের জান্তা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি চিঠিতে প্রশংসা করার এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার অনুরোধ জানানোর মাত্র দুই সপ্তাহ পর। এই পদক্ষেপকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো “অত্যন্ত উদ্বেগজনক” হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মায়ানমার নীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিকস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা জোনাথন মিও কিয়াও থাং, এমসিএম গ্রুপ এবং এর মালিক আউং হ্লাইং উ, সানটেক টেকনোলজিস এবং এর মালিক সিট তাইং আউং এবং তিন লাট মিন-এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই সংস্থা ও ব্যক্তিরা পূর্বে মায়ানমারের সামরিক শাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আউং সান সু চি-র নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে, যা দেশটিকে গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত করে। এই অভ্যুত্থানের পর থেকে হাজার হাজার মানুষ নিহত, ৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে। মিন অং হ্লাইং গত ১১ জুলাই ট্রাম্পকে একটি চিঠি লিখে মায়ানমারের রপ্তানির ওপর ৪০% শুল্ক হ্রাস এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার অনুরোধ করেন। তিনি ট্রাম্পের “দৃঢ় নেতৃত্ব” এবং “সত্যিকারের দেশপ্রেমিক” হিসেবে প্রশংসা করেন এবং মায়ানমারের রপ্তানির শুল্ক ১০-২০% এ নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেন, বিনিময়ে মার্কিন আমদানির ওপর শুল্ক ০-১০% করার প্রতিশ্রুতি দেন।
মায়ানমার বিশ্বের বিরল আর্থ মিনারেলের একটি প্রধান উৎস, যা হাই-টেক প্রতিরক্ষা ও ভোক্তা পণ্যে ব্যবহৃত হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় এই খনিজগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করা একটি প্রধান লক্ষ্য। তবে, মায়ানমারের বেশিরভাগ বিরল আর্থ খনি কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবস্থিত, যারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং এই খনিজগুলোর বেশিরভাগ চীনে প্রক্রিয়াজাত হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই পদক্ষেপকে “চমকপ্রদ” এবং “অত্যন্ত উদ্বেগজনক” বলে অভিহিত করেছে। সংস্থার এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর জন সিফটন বলেন, “এই সিদ্ধান্ত মায়ানমারের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের শাস্তিমূলক নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়, যারা ২০২১ সালে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করেছে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত।”
এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পেছনে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ, এবং হোয়াইট হাউসও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্যের জন্য সাড়া দেয়নি। সমালোচকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ মায়ানমারের সামরিক শাসনকে উৎসাহিত করতে পারে এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াইরতদের হতাশ করতে পারে। এছাড়াও, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, বিশেষ করে বিরল আর্থ মিনারেলের সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ইন্ডিয়া টুডে