২২ জুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা—ফোরডো, নাতানজ, এবং ইসফাহান—এ বোমা হামলা চালিয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি “অত্যন্ত সফল” অভিযান হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে এই হামলায় ইরানের মূল পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সুবিধাগুলো “পুরোপুরি ধ্বংস” হয়েছে।
এই হামলায় মার্কিন বিমান বাহিনীর বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে ৩০,০০০ পাউন্ডের গাইডেড বাঙ্কার বাস্টার বোমা (জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর) এবং মার্কিন নৌবাহিনীর সাবমেরিন থেকে ৩০টি টমাহক ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং তিনি ইরানকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনায় বসতে বলেছেন, অন্যথায় আরও কঠোর হামলার হুমকি দিয়েছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন যে ইরান তার সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ রক্ষার জন্য “সব বিকল্প” সংরক্ষণ করছে। ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা দাবি করেছে যে এই হামলা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে পারেনি এবং ফোরডো সুবিধা পূর্বেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, ফলে ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে যে হামলার পর এই স্থাপনাগুলোতে বিকিরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন, এটিকে “ইতিহাস পরিবর্তনকারী” বলে অভিহিত করেছেন। তবে, ইরানের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক হামলার হুমকির কারণে এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ইরান ইতোমধ্যে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে মিসাইল হামলা চালিয়েছে, যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে একটি বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে, এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটিকে “বিপজ্জনক বৃদ্ধি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এই হামলা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিছু রিপাবলিকান নেতা, যেমন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এবং হাউস স্পিকার মাইক জনসন, এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন, তবে ডেমোক্র্যাট নেতারা, যেমন হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফ্রিস এবং সিনেটর জিন শাহিন, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এই হামলাকে সংবিধানের লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছেন। এমনকি ট্রাম্পের নিজের দলের মধ্যেও, যেমন রিপাবলিকান প্রতিনিধি টমাস ম্যাসি, এই হামলার বিরোধিতা করেছেন।
এই ঘটনা ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত হওয়ার প্রথম ঘটনা, যা ১৩ জুন থেকে শুরু হয়েছিল যখন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা শুরু করে। ট্রাম্প পূর্বে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন, তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সঙ্গে যোগাযোগের ব্যর্থতা এবং ইসরায়েলের চাপের কারণে তিনি সামরিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেন।