মীর দিনার হোসেন: মার্কিন সিনেটে শুনানি চলছে এস পল কাপুরের। শুনানিতে উতরালে তিনি হবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কাপুর ডোনাল্ড লুর স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি বাইডেন প্রশাসনের সময় এ পদে ছিলেন।
পল কাপুর মূলতঃ ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, পাকিস্তানের নিরাপত্তা ঝুঁকি, এবং দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবেন। পল কাপুরের অন্যতম ফোকাস থাকবে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় মার্কিন নীতি ইন্দো-প্যাসিফিকের উপর।
পল কাপুরের নিয়োগ পেলে কিছু সূত্রের অনুমান, তার নীতি ভারত-কেন্দ্রিক হতে পারে, যা বাংলাদেশের উপর পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে।
পল কাপুর ইউ.এস. নেভাল পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্কুলের অধ্যাপক, যিনি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা, পারমাণবিক নীতি এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তিনি Jihad as Grand Strategy এবং Dangerous Deterrent বইয়ের লেখক।
পল কাপুর তার গবেষণায় পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির ব্যবহারকে রাষ্ট্রীয় কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা তিনি Jihad as Grand Strategy বইয়ে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি যুক্তি দেন যে পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করে ভারতের বিরুদ্ধে এবং আফগানিস্তানে প্রভাব বজায় রাখার জন্য, যা রাষ্ট্রীয় দুর্বলতার ফল নয়, বরং একটি পরিকল্পিত কৌশল।
তিনি পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি এবং জঙ্গি কার্যক্রমকে অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার কারণ হিসেবে দেখেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি “বিপজ্জনক চক্র” সৃষ্টি করেছে, যেখানে পাকিস্তান প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে উসকানি দেয় এবং ভারত প্রচলিত সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে জবাব দেয়।
অতি সম্প্রতি পল কাপুর বলেছেন, “যদি আমার মনোনয়ন নিশ্চিত হয়, আমি পাকিস্তানের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা করব যেখানে এটি আমেরিকার স্বার্থে হবে।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে পল কাপুর ইঙ্গিত দেন যে তিনি পাকিস্তানের সাথে সীমিত, আমেরিকার স্বার্থ-কেন্দ্রিক সহযোগিতার পক্ষে, যেমন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রম বা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ শৃঙ্খল নিশ্চিত করা। তবে, এটি তার পাকিস্তান সম্পর্কে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন নয়, বরং বাস্তববাদী কূটনৈতিক পদ্ধতির ইঙ্গিত।
পল কাপুর মার্কিন-ভারত কৌশলগত সম্পর্কের একজন দৃঢ় সমর্থক, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি ২০২৩ সালে একটি প্রবন্ধে বলেছেন, মার্কিন-ভারত সম্পর্কের “অনিবার্য” গুরুত্ব রয়েছে, তবে এটি সফল করতে সতর্ক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
তিনি বাইডেন প্রশাসনের ভারত নীতির সমালোচনা করেছেন, যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ভারত-কেন্দ্রিক নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
পল কাপুরের বক্তব্যে যে নীতিগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়:
পল কাপুর এর মনোনয়ন এবং তার সাম্প্রতিক বক্তব্য পাকিস্তানের সাথে সহযোগিতার বিষয়ে একটি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়, তবে এটি তার পাকিস্তান সম্পর্কে সমালোচনামূলক অবস্থান বা ট্রাম্প প্রশাসনের ভারত-কেন্দ্রিক নীতির আমূল পরিবর্তন নয়। তিনি পাকিস্তানের সাথে সহযোগিতাকে আমেরিকার সুনির্দিষ্ট স্বার্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারেন, যেমন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রম বা চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ।
ট্রাম্পের নীতি, যেমন পাকিস্তানি পণ্যের উপর ২৯% শুল্ক আরোপ, পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক চাপ বজায় রাখার ইঙ্গিত দেয়, যা কাপুর এর কঠোর অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
পল কাপুর এর দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত অবস্থান মার্কিন-ভারত সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয় এবং পাকিস্তানের জঙ্গি ও পারমাণবিক নীতির সমালোচনা করে। সম্প্রতি এক বক্তব্যে পল কাপুর পাকিস্তানের সাথে সীমিত সহযোগিতার ইঙ্গিত দিলেও, এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, নীতিগত পরিবর্তন নয়। তার নেতৃত্বে মার্কিন নীতি সম্ভবত ভারতের সাথে সম্পর্ক জোরদার করবে এবং পাকিস্তানের প্রতি কঠোর অবস্থান বজায় রাখবে।