আইবিএন এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ান রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম আরটি কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্ব ‘চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’।
১৩ নভেম্বর ২০২৫ আরটি-এর ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। এটি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিখিত উত্তর-ভিত্তিক সাক্ষাৎকার যেখানে শেখ হাসিনা গত বছরের অভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিদেশি হস্তক্ষেপ এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
আরটি কে দেওয়া শেখ হাসিনার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
আরটি : আপনার সরকার শুধু পতন হয়নি, এটি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। আপনি কি মনে করেন এটি কেন ঘটল?
শেখ হাসিনা : গত বছরের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের উপর একটি নতুন নেতৃত্ব “imposed” (জারি) করা হয়েছে। এটি জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভ্যুত্থানটি শুরু হয়েছিল শান্তিপূর্ণভাবে, কিন্তু পরে এটি উত্তেজিত হয়ে ওঠে কারণ বিদেশি ভাড়াটেরা উস্কানি দিয়েছে। ফরেনসিক প্রমাণ দেখিয়েছে যে, তারা স্নাইপার রাইফেল এবং ৭.৬২ ক্যালিবারের গুলি ব্যবহার করে লোকজন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আক্রমণ করেছে। র্যাডিক্যালরা যারা আগুন লাগিয়েছে, তাদের নতুন কর্তৃপক্ষ মুক্তি দিয়েছে এবং “জুলাই ওয়ারিয়র” বলে প্রশংসা করেছে। এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফল।
আরটি : মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে গঠিত হলো? এটি কি গণতান্ত্রিক?
শেখ হাসিনা : এই সরকারটি জনগণের উপর “imposed” করা হয়েছে এবং এটি নির্বাচিত নয়। ইউনুস একজন অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ নন। পশ্চিমা দেশগুলো গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু ইউনুসের মতো ব্যক্তিকে সমর্থন করে যারা জনগণের ভোট ছাড়াই শাসন করছে। এটি এক বছর ধরে চলছে নির্বাচন ছাড়াই, এবং পশ্চিমা দেশগুলো এর প্রতি অন্ধ। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা কয়েক কোটি মানুষের ভোট অস্বীকার করা।
আরটি : আপনি বিদেশি ভাড়াটেদের উল্লেখ করেছেন। এর প্রমাণ কী এবং কারা এর পিছনে?
শেখ হাসিনা : বিচারিক প্রমাণ রয়েছে যা বিদেশি ভাড়াটেদের উস্কানিদাতা হিসেবে উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।) ফরেনসিক তদন্তে পাওয়া গেছে যে, তারা উন্নত অস্ত্র ব্যবহার করেছে যা সাধারণ প্রতিবাদকারীদের কাছে থাকার কথা নয়। আমার পূর্ববর্তী মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও বলেছেন যে, মার্কিন এনজিও এবং পশ্চিমা শক্তির ভূমিকা ছিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীন নীতির বিরুদ্ধে। এটি একটি রিজিম চেঞ্জের অভিযান।
আরটি : আওয়ামী লীগের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আপনার মতামত কী?
শেখ হাসিনা : আসন্ন নির্বাচনগুলো স্বাধীন, ন্যায়সঙ্গত বা অন্তর্ভুক্তিমূলক) হবে না। “আমরা বাংলাদেশের প্রধান দল, কয়েক কোটি সমর্থকের, এবং ইতিহাসে নয়বার নির্বাচিত। আমাদের অংশগ্রহণ ছাড়া জনগণের কোনো সত্যিকারের পছন্দ নেই। আমরা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছিলাম – ছবি-ভিত্তিক ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স – কিন্তু এখন আমাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।
আরটি : ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-এর বিরুদ্ধে আপনার মামলা নিয়ে কী বলবেন? ১৭ নভেম্বরে রায় আসতে পারে।
শেখ হাসিনা : আইসিটি’কে আমার রাজনৈতিক বিরোধীরা কাঙ্গারু কোর্টে পরিণত করেছে যাতে আমাকে এবং আওয়ামী লীগকে অকার্যকর করা যায়। রায়টি পূর্বনির্ধারিত, এবং মৃত্যুদণ্ডের দাবি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অসুরক্ষা এবং হত্যাকারী উদ্দেশ্য প্রকাশ করে। জাতিসংঘের হাই কমিশনার এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়েছে। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
আরটি : সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি কীভাবে প্রভাবিত?
শেখ হাসিনা : সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে আলোচনা সবসময় চলে এসেছে, আমার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে। এটি বাংলাদেশের অংশ, কিন্তু বর্তমান অস্থিরতা এটিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
আরটি : আপনি কি ফিরে আসবেন এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী?
শেখ হাসিনা : বাংলাদেশ এই অবস্থায় থাকতে পারবে না… এটি আবার উঠে দাঁড়াবে। আমি স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি জানাই। আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে – সরকার বা বিরোধী হিসেবে। আমার পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়াই এটি সম্ভব। কিন্তু বর্তমান শাসন ক্ষমতা আছে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে।

