বঙ্গবন্ধু আমার বঙ্গবন্ধু, শ্রদ্ধাঞ্জলি 

পনেরো আগস্ট ১৯৭৫ সাল। কেঁপে উঠে ভোরের বৃষ্টিভেজা মাটি, থেমে যায় মেঘ, নকশী কাঁথায় আবৃত হয় জনজাতি। আত্মঘাতী বাঙালিকে মানুষ করার কারিগর, মানচিত্রে নতুন রাজনৈতিক ভূখন্ড রাজা শেখ মুজিব নেই! কী আশ্চর্য কোলাহল কই? জনপদ ফাঁকা, মানুষ বোবা, আবার অনেকেই আনন্দে গা ভাসিয়ে উল্লাস করছে! ওরা একাত্তরে পরাজিত ছিল।

IBN-News-Logo-Blue
By
IBN News
WE Are love for news
ছবি: সংগৃহীত।

আজ সেই ভয়াল ১৫ই আগস্ট ২০২৫।এবারের শোক দিবস অন্যরকম। ৫০ বছর পর আবার গৌরবের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ধূলায় লুন্টিত হল! পনেরো আগস্ট ১৯৭৫ সাল। কেঁপে উঠে ভোরের বৃষ্টিভেজা মাটি, থেমে যায় মেঘ, নকশী কাঁথায় আবৃত হয় জনজাতি। আত্মঘাতী বাঙালিকে মানুষ করার কারিগর, মানচিত্রে নতুন রাজনৈতিক ভূখন্ড রাজা শেখ মুজিব নেই! কী আশ্চর্য কোলাহল কই? জনপদ ফাঁকা, মানুষ বোবা, আবার অনেকেই আনন্দে গা ভাসিয়ে উল্লাস করছে! ওরা একাত্তরে পরাজিত ছিল।

সেদিন আমাদের পাশের বাড়ি ভারতের স্বাধীনতা দিবস। সম্ভবতঃ হত্যাকারী সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল মহল ভেবেছিলো ভারত স্বাধীনতার উৎসবে মাতোয়ারা থাকবে আর আমরা মহানায়ককে টুঙ্গীপাড়ায় রেখে আসবো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয় দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায়। ৭৫’এ আওয়ামী লীগ রাস্তায় বের হয়নি, কাঁদেনি! জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা বলেনি। গাছ কেটে রাস্তা বন্ধ করেনি।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ায় একুশ বছর শেখ মুজিব নামটি পর্যন্ত নির্বাসনে ছিলো। ওরা শেখ মুজিবকে আড়াঁল করতে চেয়েছিলো জানপ্রাণ দিয়ে। পারেনি, ১৯৯৬ সালে মহানায়ক ফিরে এলেন। তবু প্রশ্ন বঙ্গবন্ধু কী সার্বজনীন বঙ্গবন্ধু হলেন? উত্তর না। কারণ একাত্তরের পরাজিত শত্রু এবং তাদের প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে মেনে নেয়নি। নেবেও না। আওয়ামী লীগ কেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সার্বজনীন শেখ মুজিব বানানোর পথে যায়নি। শেখ হাসিনা পারতো কিন্তু করেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হল, দোষীদের ফাঁসি হল, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আংশিক ফিরে এলো। ২০০১ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা হারায়। এলো বিএনপি, আবার যেই লাউ সেই কদু! জাতীয় শোক দিবস বন্ধ হল।

১/১১’র পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলো, পনেরো বছর টানা শাসন। চারিদিকে বঙ্গবন্ধুর জয়গান। কই? শেখ হাসিনা পারেনি বঙ্গবন্ধুকে সকল নাগরিকের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে। পৃথিবীর বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ ভারত-আমেরিকায় জাতির জনক নিয়ে গান্ধী-ওয়াশিংটন প্রশ্নে জনমনে দ্বিমত নেই কিন্তু বাংলাদেশে?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপোষ করেছেন ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী শক্তির সাথে। আওয়ামী লীগ শাসনামলেই মাদ্রাসা ছাত্ররা পাবনায় বঙ্গবন্ধুর স্টাচ্যুতে হাত ভেঙ্গেছে! দেশে বেড়েছে হিজাব-নিকাব-শরিয়তি আইন। রাষ্ট্রীয় মদদে মসজিদ-মাদ্রাসা ছেয়ে গেছে, সব মেনে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বারবার আপোষ করছেন ধর্মান্ধ জামায়াত,হেফাজত ও ইসলামিক দলের সাথে কিন্তু তিনি পারেননি দেশের বৃহত্তর বিরোধী দল বিএনপির সাথে বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে একটি সার্বজনীন সমঝোতায় যেতে!

৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা–কর্মী, সমর্থক পরাজিত সৈনিকের মত রণক্ষেত্র থেকে অপমানজনক পলায়নের পর দেশত্যাগ করেন। এদিকে তারা দলের সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের যুদ্ধের ময়দানে অরক্ষিত রেখে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ বছর ক্ষমতার থেকে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় মর্যদার প্রতিষ্ঠিত করার ‘স্বপ্নসৌধ’ নির্মাণ করেন দেশের কোনায় কোনায় কিন্তু ২৪’র মহাবিদ্রোহে ৪৫ মিনিটের নোটিশে বাংলাদেশ ছাড়ার দু’ঘন্টার মাথায় বঙ্গবন্ধু চিহ্ন পর্যন্ত অবশিষ্ট রইল না। সেই ১৯৭৫-এর মত এবারো ৫ আগস্ট দলের চাটুকার, দুর্নীতিবাজ ও দুঃশাসনের সাথী নেতাকর্মী, সমর্থক আড়াঁলেই ছিল।

দল এভাবে কেন গণবিছিন্ন হয়ে পড়ল?

তবু বলি, বঙ্গবন্ধু আমার বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতার স্মৃতি-তে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক: রতন তালুকদার, সম্পাদক, সাপ্তাহিক জন্মভূমি। নিউ ইয়র্ক, ১৫ই আগস্ট ২০২৫।।

Share This Article
Follow:
WE Are love for news
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version