আইবিএন রিপোর্ট: নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানির প্রাথমিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই জয় কেবল তাঁর তরুণ নেতৃত্ব ও প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনই নয়, বরং আমেরিকার সংবিধানে উল্লিখিত সকলের সমানাধিকারের চেতনার প্রকাশ। তবে, এই বিজয় কিছু পক্ষের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, যা তাদের মন্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। খবর বাপসনিউজ
৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি, উগান্ডায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিয়া মুসলিম, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির ৩৬তম জেলার প্রতিনিধি হিসেবে ২০২১ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মা মীরা নায়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক। হার্ভার্ডের শিক্ষিত এই পরিবারের সন্তান জোহরান তাঁর নিরহংকারী ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত। তিনি মানুষকে গোষ্ঠী, ধর্ম বা বর্ণের ভিত্তিতে বিভাজন না করে সকলকে একত্রিত করার পক্ষে কাজ করে চলেছেন।
প্রাথমিক নির্বাচনে অভূতপূর্ব জয়:
জোহরান মামদানি ২০২৫ সালের ২৪ জুন ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে পরাজিত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। নিউইয়র্ক সিটির র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং পদ্ধতিতে তিনি তৃতীয় ধাপে ৫৬% ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেন, যেখানে কুওমো পেয়েছেন ৩৬.৪% ভোট। এই জয় তাঁর তৃণমূল সমর্থন ও প্রগতিশীল নীতির প্রতি ভোটারদের আকর্ষণের প্রমাণ।
সমীক্ষায় এগিয়ে:
সাম্প্রতিক ‘আমেরিকান পালস’ সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগামী ৪ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জোহরান মামদানি ৩৪.৪% ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো ২৯.৫%, রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া ১৬%, এবং বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ১৪% ভোট পাবেন বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সমীক্ষায় ৬২% ভোটার এরিক অ্যাডামসকে এবং ৫২% অ্যান্ড্রু কুওমোকে অপছন্দ করেছেন, যেখানে জোহরানের প্রতি ৪৭% ভোটার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন এবং ৪২% তাঁকে অপছন্দ করেছেন।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও সমালোচনা:
ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে জোহরান মামদানি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, বিনামূল্যে বাস পরিষেবা, সরকারি মালিকানাধীন মুদি দোকান, এবং ধনী ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের উপর কর বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান এবং ইসরায়েলের সমালোচনার জন্যও পরিচিত, যা তাঁর প্রচারণাকে বিতর্কিত করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করলেও, জোহরান নিজেকে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন এবং কমিউনিজমের মূল বৈশিষ্ট্য যেমন ব্যক্তিগত মালিকানা বিলুপ্তির পক্ষে কখনো অবস্থান নেননি।
জনপ্রিয়তার উত্থান:
প্রাইমারির আগে স্বল্প পরিচিত থাকলেও, জোহরান মামদানি তাঁর প্রচারণায় তরুণ ও তৃণমূল ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। বার্নি স্যান্ডার্স এবং আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের মতো প্রগতিশীল নেতাদের সমর্থন তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। তিনি নিউইয়র্কের আবাসন সংকট, পরিবহন, এবং অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছেন।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা:
জোহরানের জয় ডেমোক্রেটদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করেছে, কারণ তাঁর প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি রিপাবলিকানদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। তবে, তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “আমি সবার মেয়র হব, যিনি আমাকে ভোট দিন বা না দিন।” নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হওয়ার সম্ভাবনা তাঁকে বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
জোহরান মামদানির উত্থান আমেরিকার রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। তাঁর মানবিক ও প্রগতিশীল নীতি, তৃণমূল সমর্থন, এবং সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এগিয়ে থাকা তাঁকে নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র হিসেবে জনপ্রিয় প্রার্থী করে তুলেছে। নভেম্বরের নির্বাচন শুধু তাঁর নেতৃত্বের পরীক্ষাই নয়, বরং নিউইয়র্কের বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর সমানাধিকারের প্রতি বিশ্বাসেরও প্রতিফলন হবে।