আইবিএন রিপোর্ট: ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বাফার জোন তৈরির প্রস্তাবে বাংলাদেশের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে আলোচনা চলছে। জাতিসংঘের আহ্বানে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী প্রেরণে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে, যদিও এটি এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। একই সঙ্গে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিদেশি সৈন্যদের ইউক্রেনে মোতায়েনের বিরুদ্ধে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যা এই প্রস্তাবকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বাংলাদেশের অবস্থান ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, জাতিসংঘের আহ্বানে ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তে একটি বাফার জোন তৈরির জন্য শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশ প্রস্তুত। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “জাতিসংঘ যদি এমন কোনো মিশনের জন্য অনুরোধ করে, তাহলে বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবে সাড়া দেবে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করেছেন যে, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনের ঐতিহ্য অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যেখানে দেশটি ইতিমধ্যে জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সৈন্য প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে, এটি কোনো একতরফা পদক্ষেপ নয়, বরং জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের উপর নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি প্রস্তাবে বাংলাদেশকে নন-ন্যাটো দেশ হিসেবে এই বাফার জোন পর্যবেক্ষণের জন্য সৈন্য প্রেরণের সম্ভাবনা উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবে সৌদি আরবের মতো অন্যান্য দেশকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং কোনো সৈন্য প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
পুতিনের সতর্কবার্তা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ধরনের বিদেশি সৈন্য মোতায়েনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউক্রেনে যেকোনো বিদেশি সৈন্য, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সৈন্যদেরকে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর জন্য “বৈধ লক্ষ্যবস্তু” হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পুতিনের এই সতর্কবার্তা মূলত যুদ্ধ চলাকালীন বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে, যদিও কিছু মিডিয়া এটিকে শান্তিরক্ষীদের প্রতি হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। রাশিয়ান সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুতিনের বক্তব্যে শান্তিরক্ষীদের সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়নি, বরং যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে অস্বীকার করা হয়েছে।
পুতিন আরও বলেন, ইউক্রেনে শান্তি চুক্তির পর বিদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজন হবে না, কারণ রাশিয়া নিজের শর্তে শান্তি চায়। এই বক্তব্য ইউক্রেনের মিত্রদের প্রস্তাবিত “রিঅ্যাসুরেন্স ফোর্স” প্রত্যাখ্যান করে, যাতে ২৬টি ইউরোপীয় দেশ অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাশিয়ান মিডিয়া এটিকে পশ্চিমা মিডিয়ার ভুল ব্যাখ্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে উঠছে, যাতে নন-ন্যাটো দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে ইউক্রেনে একটি বাফার জোন তৈরি করা হবে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সম্ভাব্য অংশগ্রহণকে কিছু সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের চাপ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অন্তত ২০০,০০০ শান্তিরক্ষীর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।