ইউএসএআইডি-র অবসান: মার্কো রুবিওর ঘোষণায় ‘এনজিও শিল্প কমপ্লেক্স’-এর পতন

রুবিওর দাবি, ইউএসএআইডি-র এই বিপুল অর্থ ব্যয় মার্কিন জনগণের করের টাকায় এনজিও নির্বাহীদের জন্য ‘পাঁচ তারকা জীবনধারা’ নিশ্চিত করেছে, যা জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে বিতর্কিত এজেন্ডাকে প্রাধান্য দিয়েছে।

IBN-News-Logo-Blue
By
IBN News
WE Are love for news
ইউএসএআইডি-র প্রধান কার্যালয়ের নামফলক খুলে ফেলা হচ্ছে।

মীর দিনার হোসেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান মার্কো রুবিও ঘোষণা করেছেন যে, সিআইএ-সংশ্লিষ্ট মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) এর কার্যক্রম ১ জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, এই সংস্থা গত কয়েক দশকে ৭১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে একটি ‘এনজিও শিল্প কমপ্লেক্স’ গড়ে তুলেছে, যা ডিইআই (বৈচিত্র্য, সমতা, ও অন্তর্ভুক্তি), সেন্সরশিপ, এবং শাসন পরিবর্তনের মতো কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করেছে।

রুবিওর দাবি, ইউএসএআইডি-র এই বিপুল অর্থ ব্যয় মার্কিন জনগণের করের টাকায় এনজিও নির্বাহীদের জন্য ‘পাঁচ তারকা জীবনধারা’ নিশ্চিত করেছে, যা জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে বিতর্কিত এজেন্ডাকে প্রাধান্য দিয়েছে।

তিনি বলেন, “এই সংস্থা মার্কিন স্বার্থের পরিবর্তে এমন কার্যক্রমে অর্থ ব্যয় করেছে, যা আমাদের জাতীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এখন থেকে বিদেশি সাহায্যের দায়িত্ব পররাষ্ট্র দপ্তর গ্রহণ করবে, যা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আলোকে আরও কঠোর তদারকির মাধ্যমে পরিচালিত হবে।”

ইউএসএআইডি-র বিতর্কিত ইতিহাস:

ইউএসএআইডি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন প্রকল্পে সাহায্য প্রদানের জন্য পরিচিত ছিল। তবে, সমালোচকদের মতে, এই সংস্থা প্রায়ই এমন এনজিও-র মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করত, যারা স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, সেন্সরশিপ প্রচার, এবং বিতর্কিত সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখত।

রুবিওর অভিযোগ, এই সংস্থা মার্কিন স্বার্থের পরিবর্তে ‘বৈশ্বিক এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগী ছিল।

পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে বিদেশী সাহায্য:

ইউএসএআইডি-র কার্যক্রম বন্ধের ফলে বিদেশি সাহায্যের দায়িত্ব এখন সম্পূর্ণভাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে চলে যাবে। রুবিও জানিয়েছেন, এই পরিবর্তনের ফলে সাহায্য বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে এবং তহবিলের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা নিশ্চিত করব যে, আমাদের সাহায্য শুধুমাত্র মার্কিন স্বার্থ এবং মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যক্রমে ব্যয় হবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

ইউএসএআইডি-র বন্ধের ঘোষণা বিশ্বব্যাপী নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে মার্কিন সরকারের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির একটি জয় হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এর ফলে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্প ব্যাহত হতে পারে।

ইউএসএআইডি-র বন্ধ ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। তবে, এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেন এই এনজিও নেটওয়ার্ককে পুনর্জননের সুযোগ না দেয় —এক্স পোষ্টে বলেছেন ইউরোপীয় সংসদ সদস্য এবং প্যাট্রিয়টস ফর ইউরোপ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আন্দ্রাস লাসজলো এমইপি।

বাংলাদেশেরপ্রেক্ষাপটে ইউএসএআইডি বন্ধের সম্ভাব্য প্রভাব:

বাংলাদেশে ইউএসএআইডি-র কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে, স্থানীয় কিছু এনজিও-র বিরুদ্ধে তহবিলের অপব্যবহার ও রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রচারের অভিযোগও উঠেছে। ইউএসএআইডি-র বন্ধের ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন সাহায্যের নতুন কাঠামোর আলোকে বাংলাদেশকে তার অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।

ইউএসএআইডি-র বন্ধের ঘোষণা বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। মার্কো রুবিওর নেতৃত্বে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এখন এই সাহায্যের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, যা জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে। এই পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী এনজিও নেটওয়ার্ক এবং তাদের কার্যক্রমের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।

Share This Article
Follow:
WE Are love for news
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version