আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ বিকৃত করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন —জাতির সঙ্গে প্রহসন: ড. প্রদীপ রঞ্জন কর

আইনটির উদ্দেশ্য ও সীমারেখা, এই আইনটি ছিল একটি বিশেষায়িত আইন, যা কেবলমাত্র ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার জন্য প্রযোজ্য। সংবিধানের ৪৭(৩) ধারার মাধ্যমে এটিকে ভূতাপেক্ষা কার্যকারিতা (retrospective effect) দেওয়া হয়।

IBN-News-Logo-Blue
By
IBN News
WE Are love for news
ছবি: সংগৃহীত

হাকিকুল ইসলাম খোকন: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। এ উদ্দেশ্যে প্রণীত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩, যার মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা।

এ বিষয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা,বাকসু’র সাবেক জিএস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড.প্রদিপ রজ্ঞন কর আইবিএননিউজকে বিস্তারিত ভাবে কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন ।তিনি বলেন, আইনটির উদ্দেশ্য ও সীমারেখা, এই আইনটি ছিল একটি বিশেষায়িত আইন, যা কেবলমাত্র ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার জন্য প্রযোজ্য। সংবিধানের ৪৭(৩) ধারার মাধ্যমে এটিকে ভূতাপেক্ষা কার্যকারিতা (retrospective effect) দেওয়া হয়।

আইনের আওতাধীন অপরাধের মধ্যে ছিল: মানবতাবিরোধী অপরাধ (Crimes against Humanity),শান্তিবিরোধী অপরাধ (Crimes against Peace),গণহত্যা (Genocide), যুদ্ধাপরাধ (War Crimes), ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন বিরোধী কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সংজ্ঞায়িত অন্যান্য অপরাধ বিকৃতি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপব্যাখ্যা।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই বিশেষ আইনটিকে বিকৃত করার অপচেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এমন বক্তব্য দিচ্ছেন যাতে বোঝানো হচ্ছে—বর্তমান সময়ের যেকোনো সহিংসতা বা হত্যাকাণ্ডকে “systematic attack” আখ্যা দিয়ে ১৯৭৩ সালের আইনের আওতায় বিচার করা সম্ভব। এটি আইনের মৌলিক উদ্দেশ্যের বিকৃতি এবং স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপব্যাখ্যা। ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে এই আইনটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সংশোধনী আনা হয়, যা সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে পাস হয়। ২১ ধারার পরিবর্তন এনে নতুন করে আপিলের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ নতুন ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেল গঠন করা হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংসদীয় প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনটির কার্যকারিতা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এতে সংবিধানের ৩১ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয়েছে এবং সংসদের কর্তৃত্ব অবমাননা করা হয়েছে।

সর্বশেষ সংশোধনীতে আইনে যুক্ত হয়েছে নতুন ধারা ৪এ, ১৩এ ও ২০এ এবং উপধারা ৩(৩) ও ১২(২)। একইসাথে পরিবর্তন আনা হয়েছে ৩(২)(এ), ৪(২) ও ১৯ ধারায়। এর মাধ্যমে মূল আইনটির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের পথ সুগম করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধীদের বিচারের জন্য একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। অথচ আজ এটিকে বিকৃত করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্যাংগারু ট্রাইব্যুনালের মতো প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চলছে, যা গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য গুরুতর হুমকি।

এটি কেবল আইন নয়, জাতির সঙ্গে এক নির্মম প্রহসন।

Share This Article
Follow:
WE Are love for news
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version