সেহলী পারভীন: ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মার্কিন ধাঁচের অভিযানে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানের মাধ্যমে ভদোদরা থেকে ২৫০ জন অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ফেরত পাঠায়। আহমেদাবাদ, সুরাট এবং ভদোদরায় ধরা পড়া এই অনুপ্রবেশকারীদের দড়ি দিয়ে বেঁধে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বলে বিভিন্ন সুত্র নিশ্চিত করেছে। এই ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই ২০২৫) সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রের মতে, এই অভিবাসীদের অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের পরিচয় যাচাইয়ের পর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমানে করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধ অভিবাসন রোধে বিএসএফ-এর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক:
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, যা ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভূমি সীমানা হিসেবে পরিচিত, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অভিবাসন, চোরাচালান এবং সীমান্ত-সংক্রান্ত হিংসার কেন্দ্রবিন্দু। বিএসএফ-এর উপর অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব থাকলেও, মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রায়ই তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ তুলে থাকে। ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিএসএফ-এর হাতে সীমান্তে অসংখ্য বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অনেকেই নিরীহ কৃষক বা স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন।
এই সাম্প্রতিক ঘটনায় অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, এই অভিযান ভারত সরকারের অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর নীতির অংশ। তবে, এই ধরনের পদক্ষেপ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার মুখে পড়তে পারে, বিশেষ করে অভিবাসীদের সঙ্গে আচরণের ধরন নিয়ে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রভাব:
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্প্রতি কিছু কূটনৈতিক টানাপোড়েন লক্ষ্য করা গেছে। গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৪-এ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের সময় ভারতীয় কোস্ট গার্ড বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে দুটি মাছধরার নৌকা জব্দ করেছিল, যাতে ৭৮ জন নাবিক ছিলেন। এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ২৫০ জন অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর ঘটনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর নতুন করে প্রভাব ফেলতে পারে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া:
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই অভিযানকে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনার বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করবে।