সন্তান ধারণ করবে রোবট, চীনের যুগান্তকারী আবিষ্কার 

চীনা বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম "গর্ভাবস্থা রোবট" তৈরির কাজ করছেন, যা মানুষের সন্তান জন্ম দিতে পারবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই অভিনব প্রযুক্তির নেতৃত্বে রয়েছেন গুয়াংজু-ভিত্তিক কাইওয়া টেকনোলজির প্রধান গবেষক ড. ঝাং কিফেং

IBN-News-Logo-Blue
By
IBN News
WE Are love for news
ছবি: সংগৃহীত।

আইবিএন রিপোর্ট: চীনা বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম “গর্ভাবস্থা রোবট” তৈরির কাজ করছেন, যা মানুষের সন্তান জন্ম দিতে পারবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই অভিনব প্রযুক্তির নেতৃত্বে রয়েছেন গুয়াংজু-ভিত্তিক কাইওয়া টেকনোলজির প্রধান গবেষক ড. ঝাং কিফেং, যিনি সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত। এই রোবটটি কৃত্রিম গর্ভাশয়ের মাধ্যমে দশ মাসের গর্ভাবস্থা প্রক্রিয়া অনুকরণ করে শিশু প্রসব করতে সক্ষম হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এর প্রোটোটাইপ উন্মোচন করা হবে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০০,০০০ ইউয়ান (প্রায় ১২ লাখ টাকা বা ১৪,০০০ মার্কিন ডলার)।

কীভাবে কাজ করবে এই রোবট: রোবটটিতে একটি কৃত্রিম গর্ভাশয় থাকবে, যেখানে ভ্রূণ কৃত্রিম অ্যামনিওটিক তরলের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে। একটি নলের মাধ্যমে ভ্রূণের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে।

ড. ঝাং জানিয়েছেন, এটি কেবল একটি ইনকিউবেটর নয়, বরং গর্ভধারণ থেকে প্রসব পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া অনুকরণ করবে। তবে, ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ বা নিষেকের বিষয়ে এখনও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।

এই প্রযুক্তি ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি “বায়োব্যাগ” প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে উন্নত করা হচ্ছে, যেখানে মেষশাবককে কৃত্রিম গর্ভে চার সপ্তাহ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল।

কাদের জন্য এই প্রযুক্তি: চীনে বন্ধ্যাত্বের হার ২০০৭ সালে ১১.৯% থেকে ২০২০ সালে ১৮% এ পৌঁছেছে। এই রোবট বন্ধ্যাত্বে ভোগা দম্পতিদের জন্য নতুন সমাধান হতে পারে।

 চীনের ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার সমস্যায় এটি বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। যারা গর্ভাবস্থার শারীরিক বা মানসিক চ্যালেঞ্জ এড়াতে চান, তারা এই প্রযুক্তি বেছে নিতে পারেন।

 নৈতিক ও আইনি প্রশ্ন: সমালোচকরা বলছেন, এটি মা ও শিশুর মধ্যে স্বাভাবিক বন্ধন নষ্ট করতে পারে এবং গর্ভাবস্থাকে কৃত্রিম করে তুলতে পারে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

চীনে বর্তমানে কৃত্রিম গর্ভাশয়ে মানব ভ্রূণ ১৪ দিনের বেশি বিকাশ করা নিষিদ্ধ। এই প্রযুক্তির বাস্তবায়নের জন্য নতুন আইনি কাঠামো প্রয়োজন।

এটি মাতৃত্ব, পারিবারিক কাঠামো এবং মানব জীবনের সংজ্ঞাকে পুনর্গঠন করতে পারে। কেউ এটিকে বিপ্লবী মনে করলেও, অনেকে এটিকে “অমানবিক” বলে সমালোচনা করছেন।

চীনের সামাজিক মাধ্যমে, যেমন ডুয়িন এবং উইবোতে, এই প্রযুক্তি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। কিছু লোক এটিকে বন্ধ্যাত্বের সমাধান হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছেন, অন্যরা পারিবারিক মূল্যবোধ ও শিশুর পরিচয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

কাইওয়া টেকনোলজি জানিয়েছে, এই প্রযুক্তি “পরিপক্ক পর্যায়ে” রয়েছে, তবে এখনও বেশ কিছু প্রযুক্তিগত ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারা গুয়াংডং প্রদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নীতিমালা তৈরির জন্য কাজ করছে। এই প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নের জন্য আরও গবেষণা এবং স্বচ্ছতা প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থা রোবট প্রজনন বিজ্ঞানে একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ হতে পারে, তবে এর নৈতিক, আইনি এবং সামাজিক প্রভাব নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। এটি বন্ধ্যাত্বের সমাধান এবং জনসংখ্যা হ্রাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও অজানা।

Share This Article
Follow:
WE Are love for news
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version