ব্যক্ত হোক জীবনের জয় -প্রত্যয়ে ‘প্রকৃতি’র নিউইয়র্কে ১৬৪’তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব পালন

জাতি, ধর্ম, ভাষা ও সীমানার ঊর্ধ্বে ওঠা রবীন্দ্রচেতনার অনুরণনে মুখর এই সন্ধ্যা ছিল সুর, কবিতা ও দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসায় গাঁথা এক অপূর্ব মিলনমেলা।

IBN-News-Logo-Blue
By
IBN News
WE Are love for news
নিউইয়র্কে 'প্রকৃতি'র আয়োজনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪'তম জন্মজয়ন্তীতে শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনা

ব্যক্ত হোক জীবনের জয় —এই প্রত্যয়ে নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘প্রকৃতি’ গত রবিবার, ১ জুন ২০২৫, আয়োজন করেছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪’তম জন্মজয়ন্তী। জাতি, ধর্ম, ভাষা ও সীমানার ঊর্ধ্বে ওঠা রবীন্দ্রচেতনার অনুরণনে মুখর এই সন্ধ্যা ছিল সুর, কবিতা ও দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসায় গাঁথা এক অপূর্ব মিলনমেলা।খবর বাপসনিউজ।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় কবিগুরুর কালজয়ী গান “হে নূতন” পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এরপর মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন যুক্তরাষ্ট্ব আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা, বাকসু’র সাবেক জিএস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড.প্রদীপ রঞ্জন কর। বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, নাট্যশিল্পী লুৎফর নাহার লতা এবং সংস্কৃতিক ব‍্যক্তিত্ব মিথুন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠক অনুপ বড়ুয়া।

উপস্থাপনায় ছিলেন কবি অসীম সাহা ও সংস্কৃতিকর্মী নাজনীন সুমন। যাঁরা সুললিত ভাষায় প্রতিটি পরিবেশনার গভীরতা ও প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন শ্রোতাদের সামনে।

অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বদেশভাবনা, প্রেম ও মানবতার ভাবনায় ভাসা একগুচ্ছ গান:
“হে নূতন দেখা দিক আর-বার”, “শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান”, “আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে”, “আমার নিশীথ রাতের বাদলধারা” (নাসিমা শাহীন), “আসা যাওয়ার পথের ধারে” (দিঠি হাসনাত), “তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা” (মৌগন্ধা আচার্য্য), “বাংলার মাটি বাংলার জল”, “ভালোবেসে সখী” (প্রসূন ঘোষ রায়), “সেই ভালো সেই ভালো” (জলি কর), “সার্থক জনম আমার” (জয়ন্তী ভট্টাচার্য্য জয়া), “এখন আর দেরি নয়”, “আমরা সবাই রাজা”, “সুখে আমায় রাখবে কেন” (মিনি কাদির), “ওহে সুন্দর মম” (রূপালি ঘোষ), “দুজনে দেখা হলো” (চন্দ্রিকা দে সেঁজুতি)।

বিশেষভাবে পরিবেশিত “ও আমার দেশের মাটি” গানটি ছিল অনুষ্ঠানের আবেগঘন মুহূর্ত—বাংলার মাটি ও মানুষের প্রেমে উজ্জীবিত এই গান আজও জাতিসত্তার প্রতীক হয়ে বাঙালির হৃদয়ে বাজে।

ছবি: আগত অতিথিদের একাংশ

কবিগুরুর গান শুধু সুরের পরিমণ্ডলে আবদ্ধ নয়, তা আত্মপ্রত্যয়ের আহ্বান, সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং মানবতাবাদী দর্শনের মহাবাণী। আজকের অস্থির বিশ্বেও তাঁর সৃষ্টি হয়ে উঠেছে প্রাসঙ্গিক, প্রেরণাদায়ক এবং চিরন্তন।
‘ব্যক্ত হোক জীবনের জয়’ “ও আমার দেশের মাটি” গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন মাইশা ও মাহিমা ।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্ম-জয়ন্তিতে স্বদেশ-ভাবনা, মানবতাবোধ, মানবপ্রেম বিষয়ক তাঁর গান দিয়ে সাজানো ব্যতিক্রমী এক আয়োজনে বিদগ্ধ প্রবাসীরা আপ্লুত হয়েছেন। “ব্যক্ত হোক জীবনের জয়’ শীর্ষক এ আয়োজনে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় প্রবাসের জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী মাইশা আর মাহিমা কর্তৃক “ও আমার দেশের মাটি” গানের সাথে দৃষ্টিনন্দন নৃত্য পরিবেশনা।

উল্লেখ্য, এই গানটি অধিকার-স্বাধিকার আন্দোলনের সময়ে রচিত এক অনন্য দেশাত্মবোধক রচনা, যা রাজনৈতিক ও আত্মিক প্রতিরোধের অস্ত্র হয়ে ওঠে এবং আজও ভারত-উপ-মহাদেশে জাতিসত্তার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

মঞ্চের পাশে স্থাপিত রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি ও মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বাছাইকৃত গানের মনোমুগ্ধকর এ আয়োজনের এ অনুষ্ঠানে জলি করের নেতৃত্বাধীন ‘প্রকৃতি-নিউইয়র্ক’র ২৩ শিল্পী কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘের পরিবেশনা শুরু করেন তাঁরই লেখা ‘হে নূতন দিক আরবার’ গানটি দিয়ে। শিল্পীরা ছিলেন নাসিমা শাহীন, দিঠি হাসনাত, মৌগন্ধা আচার্য্য, প্রসূন ঘোষ রায়, জলি কর, জয়ন্তী ভট্টাচার্য্য জয়া, মিনি কাদির, রুপালি ঘোষ, চন্দ্রিকা দে সেঁজুতি, তানভীর রহমান প্রতীক, মুক্তি সরকার, সোনিয়া মোত্তালিব, কার্তিক চন্দ্র, জোসিফিন মিষ্টি, স্বপ্নিল সজীব ।

এরপর একে একে একক ও সমবেত কন্ঠে গীত হয় ‘শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয়’, ‘আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’, ‘আমার নিশীথ রাতের বাদলধারা’, ‘আসা যাওয়ার পথের ধারে’, তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘ভালোবেসে সখী, ‘সেই ভালো সেই ভালো’, ‘সার্থক জনম আমার’, ‘এখন আর দেরি নয়’, ‘আমরা সবাই রাজা’, ‘সুখে আমায় রাখবে কেন’, ‘ওহে সুন্দর মম’, ‘দুজনে দেখা হলো’, ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘আমি তোমার প্রেমে’, ‘পাখি আমার নীড়ের পাখি’, ‘শুধু মনে পড়ে হাসি মুখখানি’, ‘লাজে বাধো-বাধো সোহাগের বাণী’, ‘মনে পড়ে সেই হৃদয়-উছাস নয়নকূলে’, ‘তুমি যে ভুলেছ ভুলে গেছি, তাই এসেছি ভুলে’, ‘ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে’, ‘ও যে মানে না মানা’, ‘দিবস রজনী আমি যেন কার’, ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা’, ‘নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়’ এবং জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। সুরের সাগরে আরো কিছুক্ষণ মন্থন করেছেন সকল বয়েসী প্রবাসীর প্রিয় শিল্পী স্বপ্নিল সজীব।

আত্মবিশ্বাস জাগাতে, সঙ্কোচ ও ভীরুতা কাটাতে, এবং নিজের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় উদ্দীপ্ত হতে গানগুলোর অন্তর্নিহিত আত্মজাগরণের আহ্বান যেমন যাদুর মতো কাজ করেছে ঠিক ততোটাই অর্থবহ এটি আজ এই সময়েও। তাই তো গানসমূহ হয়ে উঠেছে সর্বজনীন এবং পেরিয়েছে সময়ের দুর্লঙ্ঘ্য সীমা।

সাহিত্য-সৌন্দর্য, সুরের মাধুর্য এবং গভীর ভাব-গাম্ভীর্যের কারণে শৈল্পিক মান উত্তীর্ণ হয়ে রবিঠাকুরের গানগুলো জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীন ও শাশ্বত হয়ে উঠেছে। সে কারণেই মিলনায়তন ভর্তি শ্রোতা তন্ময় হয়ে বিমুগ্ধচিত্তে শেষ পর্যন্ত প্রাণভওে ত উপভোগ করেছেন। আটলান্টিকের এপাড়েও বাংলা আর বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত সংস্কৃতির বিশুদ্ধ ফল্গুধারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত রাখার সংকল্পে ‘প্রকৃতি-নিউইয়র্ক’র অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে অনেকের প্রত্যাশা।

ছবিতে আগত অতিথিদের একাংশ

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধুনা লুপ্ত সাপ্তাহিক প্রবাসীর সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, গীতিকার ও সুরকার মেহফজ রহমান, সাপ্তাহিক বাংগালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, সাপ্তাহিক ঠিকানা প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, প্রথ‍্যতা চিএশিল্পী ড.ওবায়দুললাহ মামুন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ও বাপসনিউজ এডিটর সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এমএ করিম জাহাঙ্গীর, আওয়ামী লীগ নেতা আকতার হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মিজানুল হক, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শেখ আতিকুল ইসলামপ্রমুখ ।

Share This Article
Follow:
WE Are love for news
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version